SM IT

আশুরাকে কেন্দ্র করে মাতম করা কি জায়েজ?
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

সংকলকঃ সুমন মাহমুদ।



হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ও উনার সম্মানিত পরিবার শহীদ হওয়ার ঘটনাকে স্বরণ করে বিলাপ করা,শরীর জখম করা,গাল,মাথা ও বুক থাবড়ানো বা এ রকম অন্য কিছু করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নেই।
আসুন হাদীসে পাকের মাধ্যমে জেনে নিইঃ

١٧٢٥ - وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: " قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ.» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
[اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ
হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (মৃত ব্যক্তির শোকে) নিজের মুখমন্ডলে আঘাত করে, জামার গলা ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়্যাতের যুগের মতো হা-হুতাশ করে বিলাপ করে, সে আমাদের দলের মধ্যে গণ্য নয়।

 দলিলঃ 

(সহীহ : বুখারী ১২৯৭, ১২৯৮, মুসলিম ১০৩, নাসায়ী ১৮৬০, ইবনু মাজাহ্ ১৫৮৪, আহমাদ ৪২১৫, ইবনু হিব্বান ৩১৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১১৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩৩, ইরওয়া ৩/৭৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৩৩)।


١٧٢٦ - وَعَنِ ابْنِ بُرْدَةَ قَالَ: «أُغْمِيَ عَلَى أَبِي مُوسِي الْأَشْعَرِيِّ ; فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ: أُمُّ عَبْدِ اللَّهِ تَصِيحُ بِرَنَّةٍ، ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ: أَلَمْ تَعْلَمِي وَكَانَ يُحَدِّثُهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَنَا بَرِيءٌ مِمَّنْ حَلَقَ، وَصَلَقَ، وَخَرَقَ» ؟ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ، وَلَفْظُهُ لِمُسْلِمٍ.
আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) হতে বর্ণিত। একবার আমার পিতা আবূ মূসা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এতে (আমার বিমাতা) তাঁর স্ত্রী ‘আবদুল্লাহর মা বিলাপ করতে লাগল। অতঃপর তিনি সংজ্ঞা লাভ করলেন এবং ‘আবদুল্লাহর মাকে বললেন, তুমি কি জানো না? তারপর তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তার সাথে সম্পর্কহীন যে মাথার চুল ছিঁড়ে, উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে এবং জামার গলা ফাঁড়ে।

 দলিলঃ 

(বুখারী ও মুসলিম; কিন্তু পাঠ মুসলিমের),

(সহীহ বুখারী তা‘লীক সূত্রে ১/৪৩৬, মুসলিম ১০৪, নাসায়ী ১৮৬৩, ইবনু মাজাহ্ ১৫৮৬)।


١٧٢٧ - وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " «أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ، لَا يَتْرُكُونَهُنَّ: الْفَخْرُ فِي الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ، وَالِاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ، وَالنِّيَاحَةُ.
وَقَالَ: النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ، وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ.

হযরত আবূ মালিক আল আশ্‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়্যাত যুগের চারটি বিষয় রয়ে গেছে যা তারা ছাড়ছে না,
(১) নিজের গুণের গর্ব,
(২) কারো বংশের নিন্দা,
(৩) গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়া এবং
(৪) বিলাপ করা।
অতঃপর তিনি বলেন, বিলাপকারিণী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্ না করে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তাকে উঠানো হবে- তখন তার গায়ে থাকবে আলকাতরার জামা ও ক্ষতের পিরান।
(সহীহ মুসলিম ৯৩৪, আহমাদ ২২৯০৩, ইবনু হিব্বান ৩১৪৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪১৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৮৩)।

١٧٢٨ - وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: «مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ تَبْكِي عِنْدَ قَبْرٍ، فَقَالَ: اتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي. قَالَتْ: إِلَيْكَ عَنِّي، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيبَتِي، وَلَمْ تَعْرِفْهُ، فَقِيلَ لَهَا: إِنَّهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَتْ بَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابِينَ. فَقَالَتْ: لَمْ أَعْرِفْكَ، فَقَالَ ": إِنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُولَى» " مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে একটি ক্ববরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্যধারণ করো। মহিলাটি বলল, আপনি আমার কাছ থেকে চলে যান, আমার উপর পতিত বিপদ আপনাকে স্পর্শ করেনি। মহিলাটি তাঁকে চিনতে পারেনি।পরে মহিলাটিকে বলা হলো, ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তখন মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হোজরা মুবারকে এলো। সেখানে কোন দারোয়ান বা পাহারাদার মোতায়েন ছিল না। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘সবরতো তাকেই বলা হয় যা বিপদের প্রথম অবস্থায় ধারণ করা হয়।


 দলিলঃ

(সহীহ বুখারী ১২৮৩, মুসলিম ৯২৬, আবূ দাঊদ ৩১২৪, আত্ তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, ইবনু মাজাহ্ ১৫৯৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১২৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩৯)।


١٧٣٢ - عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: «لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّائِحَةَ، وَالْمُسْتَمِعَةَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ.
الْفَصْلُ الثَّانِي

হযরত আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোকে মাতমকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীদের অভিসম্পাত করেছেন।
(আবূ দাঊদ ৩১২৮, আহমাদ ১১৬২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১১৩, ইরওয়া ৩/৭৬৯, আত্ তারগীব ২০৬৮, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৬৯০)।

١٧٣٣ - وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " «عَجَبٌ لِلْمُؤْمِنِ! إِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ حَمِدَ وَشَكَرَ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيبَةٌ حَمِدَ اللَّهَ وَصَبَرَ، وَالْمُؤْمِنُ يُؤْجَرُ فِي كُلِّ أَمْرِهِ حَتَّى فِي اللُّقْمَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى فِي امْرَأَتِهِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ.
হযরত সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের কাজ বড় বিস্ময়কর। সে সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা ও শুকর আদায় করে, আবার বিপদেও তেমনি আল্লাহর প্রশংসা ও ধৈর্যধারণ করে।মু’মিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার সময়েও।

 দলিলঃ 

 (বায়হাক্বী’র শু‘আবুল ঈমান,সহীহ আহমাদ ১৪৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪০)।


١٧٤٠ - عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " «مَنْ نِيحَ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ يُعَذَّبُ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» ". مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
হযরত মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা হয় ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হবে।

 দলিলঃ

(সহীহ : বুখারী ১২৯১, মুসলিম ৯৩৩, আত্ তিরমিযী ১০০০, আহমাদ ১৮২৩৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২০)।


١٧٤١ - «وَعَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ عَائِشَةَ وَذُكِرَ لَهَا: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَقُولُ: إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ عَلَيْهِ تَقُولُ: يَغْفِرُ اللَّهُ لِأَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَمَا إِنَّهُ لَمْ يَكْذِبْ، وَلَكِنَّهُ نَسِيَ أَوْ أَخْطَأَ، إِنَّمَا مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى يَهُودِيَّةٍ يُبْكَى عَلَيْهَا، فَقَالَ: إِنَّهُمْ لَيَبْكُونَ عَلَيْهَا، وَإِنَّهَا لَتُعَذَّبُ فِي قَبْرِهَا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
‘আমরাহ্ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা-কে বলতে শুনেছি। তাকে বলা হল যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ‘আয়িশাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেছেন, আল্লাহ আবূ ‘আবদুর রহমানকে (ইবনু ‘উমারের উপনাম নাম) মাফ করুন।তিনি মিথ্যা কথা বলেননি।কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন অথবা ইজতিহাদী ভুল করেছেন।(ব্যাপার হলো)একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ইয়াহূদী মহিলার ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তার ক্ববরের পাশে লোকজন কাঁদছে।এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর আত্মীয়-স্বজনরা তার জন্য কাঁদছে, আর এ মহিলাকে তার ক্ববরে ‘আযাব দেয়া হচ্ছে।

 দলিলঃ  

(সহীহ বুখারী ১২৮৯, মুসলিম ৯৩২, আত্ তিরমিযী ১০০৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮০৩, আহমাদ ২৪৭৫৮, ইবনু হিব্বান ৩১২৩, সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১৯৯৫; শব্দ বিন্যাস মুসলিমের)।


١٧٤٣ - وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «لَمَّا جَاءَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَتْلُ ابْنِ حَارِثَةَ وَجَعْفَرٍ وَابْنِ رَوَاحَةَ، جَلَسَ يُعْرَفُ فِيهِ الْحُزْنُ، وَأَنَا أَنْظُرُ مِنْ صَائِرِ الْبَابِ تَعْنِي شَقَّ الْبَابِ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ: إِنَّ نِسَاءَ جَعْفَرٍ وَذَكَرَ بُكَاءَهُنَّ فَأَمَرَهُ أَنْ يَنْهَاهُنَّ، فَذَهَبَ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ لَمْ يُطِعْنَهُ فَقَالَ: انْهَهُنَّ، فَأَتَاهُ الثَّالِثَةَ قَالَ: وَاللَّهِ غَلَبْنَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَزَعَمْتُ أَنَّهُ قَالَ: فَاحْثُ فِي أَفْوَاهِهِنَّ التُّرَابَ، فَقُلْتُ: أَرْغَمَ اللَّهُ أَنْفَكَ، لَمْ تَفْعَلْ مَا أَمَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ تَتْرُكْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْعَنَاءِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
হযরত ‘আয়িশাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মূতার যুদ্ধে) ইবনু হারিসাহ্, জা‘ফার ও ইবনু রাওয়াহার শাহাদাতের খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছালে তিনি (মসজিদে নবাবীতে) বসে পড়লেন।তাঁর চেহারায় শোক-দুঃখের ছায়া পরিস্ফুট হয়ে উঠল।আমি দরজার ফোকর দিয়ে তাঁর অবস্থা দেখছিলাম।এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর খিদমাতে বলতে লাগল, জা‘ফরের পরিবারের মেয়েরা এরূপ এরূপ করছে (অর্থাৎ তাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করল)।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ওদের কাছে গিয়ে কাঁদতে নিষেধ করার হুকুম দিলেন।লোকটি চলে গেল। (কিছুক্ষণ পর) দ্বিতীয়বার এসে বলল, মহিলারা কোন কথা মানছে না।আবারও তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করে তাকে পাঠালেন।লোকটি চলে গেল। তাদেরকে নিষেধ করল।(কিছুক্ষণ পর) সে তৃতীয়বার ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমার ওপর বিজয়ী হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার কথা মানছে না। ‘আয়িশাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, আমার ধারণা হলো, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ তাদের মুখে মাটি ঢেলে দাও। ‘আয়িশাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, আমি মনে মনে (ওই ব্যক্তিকে) বললাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, তুমি কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হুকুম দিচ্ছেন তা পালন করলে না? আর তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুঃখ দেয়া হতে বিরত হচ্ছ না।

 দলিলঃ  

(সহীহ : বুখারী ১২৯৯, মুসলিম ৯৩৫, ইবনু হিব্বান ৩১৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৮৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩১)।


١٧٤٤ - وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: «لَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ قُلْتُ: غَرِيبٌ وَفِي أَرْضِ غُرْبَةٍ، لَأَبْكِيَنَّهُ بُكَاءً يُتَحَدَّثُ عَنْهُ، فَكُنْتُ قَدْ تَهَيَّأْتُ لِلْبُكَاءِ عَلَيْهِ، إِذْ أَقْبَلَتِ امْرَأَةٌ تُرِيدُ أَنْ تُسْعِدَنِي، فَاسْتَقْبَلَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: " أَتُرِيدِينَ أَنْ تُدْخُلِي الشَّيْطَانَ بَيْتًا أَخْرَجَهُ اللَّهُ مِنْهُ مَرَّتَيْنِ، وَكَفَفْتُ عَنِ الْبُكَاءِ، فَلَمْ أَبْكِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ.
হযরত উম্মে সালামাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহ্ মৃত্যুবরণ করলে আমি বললাম, আবূ সালামাহ্ মুসাফির ছিলেন, মুসাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন। অর্থাৎ মক্কার লোক মাদীনায় মৃত্যুবরণ করলেন।আমি তাঁর জন্য এমনভাবে কাঁদব যে, আমার কান্নাকাটি সম্পর্কে লোকেরা আলোচনা করবে।আমি কান্নাকাটি করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলাম।হঠাৎ একজন মহিলা এসে আমার সাথে কাঁদতে চাইল।এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন।তিনি বললেন, এই ঘর হতে আল্লাহ দু’বার শায়ত্বন (শয়তান) কে বহিষ্কার করেছেন।তোমরা তাকে পুনরায় এখানে আনতে চাও?
উম্মে সালামাহ্ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, তাঁর এ হুঁশিয়ারী শুনে আমি (কান্নাকাটি) করা হতে চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আর কাঁদিনি।

 দলিলঃ  

(সহীহ মুসলিম ৯২২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২৯)।


١٧٤٥ - وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: أُغْمِيَ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَوَاحَةَ، فَجَعَلَتْ أُخْتُهُ عَمْرَةُ تَبْكِي: وَا جَبَلَاهُ، وَا كَذَا، تُعَدِّدُ عَلَيْهِ، فَقَالَ حِينَ أَفَاقَ: مَا قُلْتِ شَيْئًا إِلَّا قِيلَ لِي أَنْتَ كَذَلِكَ، زَادَ فِي رِوَايَةٍ: فَلَمَّا مَاتَ لَمْ تَبْكِ عَلَيْهِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
হযরত নু‘মান ইবনু বাশীর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্, (কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে) জ্ঞান হারালেন।তাঁর বোন ‘আমরাহ্ কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, হে পর্বতসম ভাই! হে আমার এমন ভাই! তেমন ভাই! অর্থাৎ এভাবে তাঁর ভাইয়ের খ্যাতির বর্ণনা করতে লাগল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহার জ্ঞান ফিরলে বোনকে বললেন, তুমি আমাকে নিয়ে যখন যা বলেছ, আমাকে তখনই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এসব গুণে গুণী আমি কিনা? অন্য এক বর্ণনায় অতিরিক্ত বর্ণনা এসেছে, যখন ‘আবদুল্লাহ (মূতার যুদ্ধে) তখন তার বোন ‘আমরাহ্ আর তাঁর জন্য কাঁদেননি।

 দলিলঃ

(সহীহ বুখারী ৪২৬৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৭২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৩৫৩)।


١٧٤٦ - وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ مَيِّتٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ بَاكِيهِمْ فَيَقُولُ: وَا جَبَلَاهُ، وَا سَيِّدَاهُ، وَنَحْوَ ذَلِكَ إِلَّا وَكَّلَ اللَّهُ بِهِ مَلَكَيْنِ يَلْهَزَانِهِ، وَيَقُولَانِ: أَهَكَذَا كُنْتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ، وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ حَسَنٌ.
হযরত আবূ মূসা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় এবং তার আপন ক্রন্দনকারীরা এ কথা বলে কাঁদে, হে আমার পাহাড়তুল্য অমুক! হে সরদার! ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ মৃত ব্যক্তির নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) প্রেরণ করেন, যারা তার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মারে আর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এমনই ছিলে?


(তিরমিযী শরীফ)

এবং তিনি বলেন, এ হাদীসটি গরীব ও হাসান)

 দলিলঃ

(হাসান লিগায়রিহী : আত্ তিরমিযী ১০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭৮৮)।


١٧٤٨ - وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «مَاتَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَكَتِ النِّسَاءُ، وَجَعَلَ عُمَرُ يَضْرِبُهُنَّ بِسَوْطِهِ، فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ وَقَالَ: مَهْلًا، ثُمَّ قَالَ: إِيَّاكُنَّ وَنَعِيقَ الشَّيْطَانِ. ثُمَّ قَالَ: إِنَّهُ مَهْمَا كَانَ مِنَ الْعَيْنِ وَمِنَ الْقَلْبِ فَمِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمِنَ الرَّحْمَةِ، وَمَا كَانَ مِنَ الْيَدِ وَمِنَ اللِّسَانِ فَمِنَ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ.
হযরত ইবনু ‘আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা হযরত যয়নাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা মারা গেলে মহিলারা কাঁদতে লাগল।হযরত উমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হাতের কোড়া দিয়ে তাদেরকে আঘাত করলেন।এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘উমর! কোমল হও। আর মহিলাদের বললেন,তোমরা তোমাদের গলার আওয়াজ শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে রাখো (অর্থাৎ চিৎকার করে ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদ না।) তারপর বললেন, যা কিছু চোখ (অশ্রু) ও হৃদয় (দুঃখ বেদনা ও শোক-তাপ) বের হয় তা আল্লাহর তরফ থেকেই বের হয়। এটা হয় রহমতের কারণে।আর যা কিছু হাত ও মুখ হতে বের হয় তা হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) তরফ হতে।

 দলিলঃ  

(আহমাদ ২১২৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৮৬৯, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ৩৩৬১, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর ২২১৫)


নবী ﷺ বলেন,
(ليس منا من الظم الخدود وشق الجيوب)

যে ব্যক্তি মুসীবতে পড়ে নিজ গালে চপেটাঘাত করল এবং শরীরের কাপড় ছিড়ল,সে আমাদের দলের নয়।"

(বুখারী শরীফ)

তিনি আরও বলেন:"মুসীবতে পড়ে বিলাপকারী, মাথা মুন্ডনকারী এবং কাপড় ও শরীর কর্তনকারীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।"
নবী ﷺ আরও বলেন:
إنّ الكاتحة إذا لم تشب فإنها تُلبّيش يؤم القيامة يرغا من جرب و بيريالا من قطران)

মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়,তাকেঁ কিয়ামতের দিন খাঁজলীযুক্ত (লোহার কাঁটাযুক্ত) কোর্তা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে।

(মুসলিম শরীফ)


হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র আলী বিন হুসাইন, ও স্ত্রী জীবিত ছিলেন।তাদের কেউ হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর শাহাদাতে মাতম করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
সুতরাং যেহুতু হাদীস শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত যে কারো মৃত্যুতেই এই রকম মাতম বা শোক পালন করা নিষেধ তাই তা বিরত থাকাই উত্তম।
তবে হ্যাঁ অবশ্যই আপনি শোহাদায়ে কারবালা বা আশুরা পালন করতেন কিন্তু তা কিভাবে,
হ্যাঁ সে ব্যাপারেও হাদীসে বা জগতবিখ্যাত আলেমগণ বর্ণনা করে গেছেন।
আপনি আশুরা উপলক্ষে সাওম পালন করতে পারেন,নফল ইবাদত বন্দেগী,জিকির আজকার ও সম্মানের সহিত হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সহ আহলে বায়াতদের স্মরণ করতে পারেন।
আল্লাহ পাক সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুক।

আমিন।

Post a Comment