SM IT


মদিনা মুনিবের আশেক আ’লা হযরতঃ
                     ----------------------সুমন মাহমুদ।

★★জন্ম পরিচয়ঃ
ভারতবর্ষে যখন ইংরেজদের অত্যাচার,অনাচার,জুলুমে ভরপুর এবং মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর কুফরী আকিদার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছিল ঠিক তখনই মহান প্রভু একজন সংস্কারককে ভারতবর্ষে প্রেরণ করে পাঠালেন।
দিনটি ছিল শনিবার ১২৭২ হিজরীর ১০ই শাবান,১৮৫৬ সালের ১৪ই জুন ইমাম আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী (রহঃ) বেরেলীর এক খান্দানী ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।উনার জন্মকালীন নাম "মুহাম্মদ" ঐতিহাসিক নাম " আল মুখতার"আর দাদাজান উনার নাম দিয়েছিলেন "আহমাদ রেজা"
পরবর্তীতে উনি মদিনা মুনিবের প্রতি আশেক হয়ে উনার নাম রাখেন " আবদে মোস্তুফা"
উনার পিতার নাম ছিল আল্লামা নকী আলী খঁন (রহঃ) এবং মাতার নাম ছিল হোসাইনা খাঁনম


★★'লা হযরতে শিক্ষা কারামতঃ
যেই বয়সে মানুষ সাধারণ খেলার মাঠে ব্যস্ত থাকে,ঠিক সেই সময় থেকে ‘‘ইমাম আহমদ রেজা খান” ইলমে দ্বীন চর্চায় গভীর মনোযোগী ছিলেন।
উনার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর ১০ মাস তিনি তখন কুরআন,হাদীস,আরবী সাহিত্য,ফিকাহসহ আরো বহু বিষয়ের উপরেই জ্ঞান সমাপ্ত করেছেন
এরই মধ্যে তিনি বেশ কয়েকজন উস্তাদের কাছে জ্ঞান অর্জন করেন এবং উনার নিজের প্রতিভার মাধ্যমে প্রায় ৫৫ রকমের বিদ্যা অর্জন করেন।
আর দীর্ঘ ৫৫ বছর দ্বীন চর্চায় উনি যেসব ফতোয়া প্রদান করেছেন তা একটি কিতাবে ১২ খন্ডের ভলিউমের মাধ্যমে সংরক্ষন করা হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে "ফতোয়ায়ে রেজভীয়া"


তিনি দীর্ঘ অর্ধশত বছরে ৫৫ টি বিষয়ের উপরে কিতাব লিখেছেন প্রায় ১৫০০।যা এতোপূর্বে কেউ লিখেন নি এবং বর্তমান পর্যন্ত লিখার সামর্থ্য হয় নাই।তিনি পবিত্র কুরআনের অনুবাদ সরাসরি তাফসীর দিয়ে করেছেন।যার নাম রেখেছেন "কানযুল ঈমান" বা ঈমানের গুপ্ত ধন।
তিনি কুরআন মাজিদের আকায়েদ সংক্রান্ত যে সঠিক অনুবাদ করেছেন তা কেবল মাত্র "কানযুল ঈমানেই" পাওয়া যায়।
ইলিমের এই সাগর আলা হযরত উনার উস্তাদ নিজ প্রতিভার গুনে যে ৫৫ টি বিষয়ের উপরে কিতাব লিখেছেন তার একটি তালিকা প্রস্তুত করে ১৩২৪ হিজরীতে মক্কা শরীফে মুফতী খলীল মক্কী (রহ) এর নিকট পেশ করিলে তাহা এযাযত অনুমতি লাভ করেন।
উনার ৫৫ টি বিষয়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হল,ইলমে কুরআন,হাদীস,ফিকাহ,তাফসীর,উসুলুল ফিকাহ,নাহু,ছরফ,মানতিক,হিসাব,হাইয়াত,মা'আনী,বয়ান,হিন্দাসা ইত্যাদি।
উনার মধ্যে এতোটাই নবীপ্রেম ছিল যে,নিজে কখনোই সুন্নতের বাহিরে একটি কদম পা বাড়াননি।তিনি বলতেন আমার হৃদয় টাকে দ্বিখন্ডিত করলে এক খন্ডে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" আর আরেকটি খন্ডে "মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখতে পাবেন


★★আলা হযরতের মূল্যায়ন বিরোধিতাদের ভালোবাসাঃ
১৯১১ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ,জিয়াউদ্দিন স্যার রামপুর হতে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় চতুর্ভুজ সংক্রান্ত প্রশ্নের সমাধান চেয়ে প্রচার করলে 'লা হযরত তা দ্রুত সমাধান করে প্রেরণ করেন।
এই আশ্চর্য্য সমাধান দেখে জিয়াউদ্দিন স্যার হতবাক হয়ে যান এবং উনি 'লা হযরতের ভক্ত হয়ে যান।শুধু তাই নয় একবার একটি গনিত নিয়ে জিয়াউদ্দিন স্যার পেরেশানে পড়লে উনি বেরেলী শরীফ যান।আ'লা হযরত তা নিমিষেই সমাধান করে দেন। এই সমাধান দেখে উনি অবাক হয়ে যান।গনিত শাস্ত্রে ছিল উনার অগাধ জ্ঞান।
বিখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল রহঃ 'লা হযরতের লিখিত "হাদায়েকে বখশীশ" "ফতোয়ায়ে রেজভীয়া" পড়ে উনার প্রেমে পড়ে গিয়েছেন।যার কারণে উনি 'লা হযরত কে যুগের ইমাম আবু হানিফা উপাধি দিয়েছিলেন।
তখনকার জামাতে ইসলামীর আমির কাউছার নিয়াজি বলেন,'লা হযরতের ফতোয়ায়ে রেজভীয়া পড়ে মনে হল যেন আমি ইসলামী জ্ঞান সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।
বাতিলদের হাকিমুল উম্মত মৌলভী আশরাফ আলী থানভী বলেন,ইমাম আহমদ রেজা খানের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে যদিও তিনি আমাকে কাফের বলেন।এটা কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্যই বলে থাকেন।আমি সুযোগ পেলেই উনার পিছনে নামাজ পড়ে নিতাম।
ভালো না বাসলে কেউ এমন কথা বলতে পারে না আর উনার অনুসারীরা 'লা হযরতের বিরোধিতা করে।আফসোস!
"মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম" পাঠ করে দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস বলেন,এই কাছিদার উছিলায় রোজ হাশরে 'লা হযরত নাজাত পেয়ে যেতে পারেন।
কেমন ভালোবাসতেন তারা 'লা হযরতকে!
মওদুদীসহ এই রকম বহু বাতিল সম্প্রদায়ের আলেম 'লা হযরতের জ্ঞানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।


★★ ইমাম আহমদ রেজা খাঁনের ‘‘আ’লা হযরত উপাধিঃ
আ’লা হযরত মানে মহান ব্যক্তি।ইমাম আহমদ রেজা খানের পান্ডিত্য ও জ্ঞান দেখে তখনকার যুগে সকল আলেমগন উনাকে আ’লা মানে উর্ধ্বে বলে ডাকতেন।সেই থেকে উনাকে সবাই আ’লা হযরত নামেই ডাকে।

★★'লা হযরতের প্রতি আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশঃ
২০০৭ সাল দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার,একটি মিলাদে গিয়েছিলাম সেখানে হুজুর বয়ান করেছিলেন।বয়ানে বলেছিলেন এমন একজন আশেকে রাসুল ছিলেন যিনি দুই হাত দিয়ে কিতাব লিখতেন এবং যিনি সবুজ ঘাসে কখনো পা দিতেন না তার নাম ইমামে আহলে সুন্নাত আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী (রহঃ)
কেনোনা সবুজ ছিল মদিনা মুনিবের রওজা শরীফের গম্বুজের নিদর্শন।
সেই থেকেই আমি 'লা হযরতের প্রেমে পড়ে যাই এবং সেই প্রেমের দর্শন পাওয়ার জন্য বেকুল


★★ইনতিকাল/ওফাত শরীফঃ
জন্ম যেহুতু হয়েছে মরতে হবেই।তবে মারা যাওয়ার আগে এমন কাজ করে যাও যেন পরবর্তী মানুষ যুগ যুগ তোমাকে নিয়ে গবেষণা করে তোমাকে ভালোবাসা।এই বাণীটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন ইমাম আহমদ রেজা খান।এই ইলিমের সাগর ৫৫ বছর দ্বীনের খেদমত করে ২৫শে সফর ১৩৪০ হিজরী,২৮ অক্টোবর ১৯২১ তারিখে ভারতের বেরেলীতে প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান।
ওখানেই উনার মাজার শরীফ শরীফ এবং প্রতি বছরের ২৫শে সফর বেরেলীসহ সারা বিশ্বে শ্রদ্ধাভরে মানুষ উনাকে স্মরণ করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত করবে


★★পরিশেষে বলব চতুর্দশ শতাব্দীর এই মুজাদ্দিদ ইমামে আহলে সুন্নাত আজিমুল বারাকাত দাজুশ শরীহা আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী রহঃ এতো বড় আলেম,জ্ঞানী,সংস্কারক,বিজ্ঞানী হয়েছেন কেবল ঈশকে মোস্তুফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসার ফলেই হয়েছেন।
তাই ভালোবাসুন মদিনা মুনিবকে ভালোবাসার মতো আর নবীজী কে ভালোবাসার আগে এই প্রেমে একবার ডুব দিয়ে যান।নিশ্চয়ই এই প্রেমেই নবীপ্রেম নিহিত রয়েছে


Post a Comment